নিজস্ব প্রতিবেদক : বাণিজ্য সুবিধা বাড়াতে দেশের দুই সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম ও মোংলার মধ্যে চলতি মাসেই প্রথমবারের মতো কনটেইনারবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে। বৃহত্তম খুলনাঞ্চলের পণ্য আমদানি-রফতানি সুবিধা বাড়াতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বর্তমানে দেশের দ্বিতীয় মোংলা সমুদ্রবন্দর এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ব্যাপক কর্মতৎপরতায় ওই বন্দরের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন হয়েছে। আর বাণিজ্যিক জাহাজ আগমন বাড়ায় মোংলা বন্দরের কর্মব্যস্ততাও বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে বন্দরের আয়ও। তবে নাব্য সংকট ও ব্যবসায়ী সুবিধাকে কাজে লাগাতে না পারা এবং বাড়তি ব্যয়সহ নানা কারণে ওই বন্দরে মাসে কমবেশি একটি কনটেইনার জাহাজ যাতায়াত করে। অথচ ওই অঞ্চলের মাছ, হিমায়িত পণ্য ও পাটসহ নানা ধরনের পণ্য রফতানির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, কনটেইনার পণ্য মোংলা বন্দরে আমদানি কম হয়। ফলে সেখানে খালি কনটেইনার পাওয়া যায় না। আবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালি কনটেইনার আনতে গেলে অতিরিক্ত ভাড়া মাশুল দিতে হয়। ফলে মোংলায় কনটেইনারের ভাড়া বেশি পড়ে। কিন্তু চট্টগ্রাম-মোংলা রুটে কনটেইনারবাহী জাহাজ চালু হলে কমে আসবে সময় ও রফতানি ব্যয়। আর দেশীয় একটি শিপিং এজেন্ট ওই সম্ভাবনাকে ভিন্ন আঙ্গিকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম-মোংলা রুটে ছোট জাহাজে কনটেইনার পরিবহন করতে চায়। তাতে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে চট্টগ্রাম থেকে খালি কনটেইনার নিয়ে মোংলা বন্দর থেকে পণ্য ভর্তি করে আবার চট্টগ্রাম হয়ে বিদেশি পাঠানো। সম্প্রতি পরীক্ষামূলকভাবে একবার জাহাজ পরিচালনা করে সুফলও মিলেছে।
সূত্র জানায়, কনটেইনার সঙ্কটের কারণে মোংলা থেকে বিদেশে নিয়মিত পণ্য রফতানি করা ব্যাহত হচ্ছে। অথচ অর্থনীতির স্বার্থেই রফতানি বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে উভয় বন্দরকে উদার হওয়া প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের মধ্যে কনটেইনারবাহী জাহাজ চলাচল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে সেজন্য আমদানিকারক এবং যারা চট্টগ্রাম-মোংলা রুটে জাহাজ চালু করবে তাদের বিশেষ সুবিধা দেয়া প্রয়োজন। তা না হলে তারা এটা নিয়মিত করতে পারবে না। ওই জাহাজ চলাচলকে ফিডার হিসেবে ট্রিট করা হলে প্রসেসগুলো আরো বেশি জটিল হয়ে যাবে।
পানগাঁওয়ের মতো চট্টগ্রাম থেকে মোংলা বন্দরে যদি খালি কনটেইনার নিয়ে যাওয়া হয়, তখন প্রসেসগুলো সহজ হবে এবং তাতে ব্যবসায় এক্সেল করা সম্ভব। গত ফেব্রুয়ারিতে ১০০ টিউজ বা ৭০টি কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম-মোংলা বন্দরে পরীক্ষামূলক অভ্যন্তরীণ রুট পরিবহন চালানো হয়েছে। সেটি সফল হওয়ায় এখন চলতি এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে নিয়মিত আনুষ্ঠানিকভাবে চট্টগ্রাম-মোংলা বন্দর রুটে কনটেইনার পরিবহন শুরু করা হবে। ওসব কনটেইনারে মাছ, হিমায়িত পণ্যসহ পাট ভর্তি করে চট্টগ্রাম হয়ে বিদেশে রফতানি করা হবে। যদিও মোংলা থেকে নিয়মিত সরাসরি ট্রানশিপমেন্ট কনটেইনার যাতায়াতে ব্যয় কম। কিন্তু তা না হওয়ায় ব্যয় এবং সময় দুটোই বাড়ে। সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম হয়ে জাহাজে কনটেইনার আনা-নেওয়ায় যে ব্যয় এবং সময় লাগবে তা অনেকটা কম।
এ বিষয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান জানান, মোংলা বন্দর অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে এই মুহূর্তে অনেক গতিশীল এবং সম্ভাবনাময়। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে বন্দরের পরিধি। চলমান বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বন্দর ঘিরে এ অঞ্চলের অর্থনীতির আরো উন্নয়ন হবে। তাছাড়া এই বন্দরে আমদানি-রফতানি বাড়াতে সকল রকম সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। চট্টগ্রাম-মোংলা রুটে কনটেইনার পরিবহন কার্যকর হলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
দেশের দুই সমুদ্রবন্দরে চালু হচ্ছে কনটেইনারবাহী জাহাজ চলাচল
আগের পোস্ট