নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার রাজদিয়া অভয় পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ বাবু বিশ্বজিৎ ঘোষের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের দূরদর্শিতার কারণে শতবর্ষী এ স্কুলের শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দলীয়করণ আর দলবাজি করে স্কুলের লেখাপড়া ধ্বংস করা হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাবু বিশ্বজিৎ ঘোষ স্কুলে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করে তাকে অপসারণ চেয়ে অভিভাবকবৃন্দ ইতিমধ্যে স্বাক্ষর প্রদান করেছেন।
একাধিক অভিভাবক জানান, তিনি স্কুলে মেয়েদের হিজাব পরতে নিরুৎসাহিত করতেন। যারা হিজাব পরে আসতো তাদের হিজাব না পরার জন্য নির্দেশনা দিতেন। এ নিয়ে এলাকায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা, প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষক কাম অধ্যক্ষকে অপসারণে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। বাবু বিশ্বজিৎ ঘোষ স্কুলকে আওয়ামীকরণ করে রাজনীতি চালু করেছিলেন। তিনি দলবাজী করে শিক্ষার বারোটা বাজিয়েছেন। টেন্ডার আহ্বানে ছল চাতুরী করে তার প্রিয়ভাজনদের কাজ পাইয়ে দিতেন। পুরনো বিল্ডিং ভাঙার প্রাপ্য টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে তুলকালাম কান্ড ঘটিয়েছেন। গোপন অর্থ লেনদেন করে স্কুলের দোকান ভাড়া দিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতাকে। ঐ দোকান ভাড়ার টাকার হদিস নেই। তার এসব কর্মকান্ডের কারণে বিদ্যালয় আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়ের অর্থ তার নিজ একাউন্টে জমা রাখার দায়ে ম্যানেজিং কমিটির শোকজ এড়াতে অর্থ লেনদেন করে পার পেয়ে যান। তিনি পছন্দের খন্ডকালীন লোক নিয়োগ দিয়েছেন। শিক্ষককে সাবজেক্ট বিবেচনায় না এনে ভিন্ন সাবজেক্টের লোক নিয়োগ দিয়েছেন। শিক্ষক আবু সুফিয়ানের সাবজেক্ট অর্থনীতি অথচ তাকে নিয়োগ দিয়েছেন হিসাব বিজ্ঞানে। তার বিরুদ্ধে তদন্তের দাবী উঠেছে। কলেজ শাখার দক্ষ অধ্যক্ষকে বিদায় করে নিজেই অধ্যক্ষ বনে যান। তার অব্যবস্থাপনায় কলেজ শাখার শিক্ষার্থী কমে গেছে। নথি তলব করলে সব অপকর্ম বেরিয়ে আসবে বলে জানায় অভিভাবকবৃন্দ। তিনি শিক্ষক সাত্তারকে বহিষ্কার করেন, আবার অদৃশ্য কারণে চাকুরীতে বহাল করেন। ২০২৪ সালের ফলাফলে স্কুলের অবস্থান ১৮তম। তা নিয়ে এলাকায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে পারতো না। সবাইকে চাকুরী যাবার ভয় দেখাতো। প্রধান শিক্ষক কাম অধ্যক্ষ পদ থেকে তাকে অপসারণ করে শিক্ষার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জোর দাবী উঠেছে।
এ বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাবু বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা মিথ্যা ও বানোয়াট। যদি কোন অনিয়ম করে থাকি যে কেউ চাইলে তদন্ত করতে পারে। একটি মহল আমাকে স্কুল থেকে সরানোর জন্য পায়তারা করছে। অভিভাবকেরা আমার সাথে আছে বলেই আমি এখনো এই স্কুলে দায়িত্ব পালন করতে পারছি।
অভিভাবক রুহুল আমিন জানান, রাজদিয়া অভয় পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ বাবু বিশ্বজিৎ ঘোষ বির্তকিত শিক্ষক। তার কর্মকান্ড প্রশ্নবিদ্ধ। রাজদিয়া অভয় পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের এক ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি জানিয়েছেন, বাবু বিশ্বজিৎ ঘোষের নিয়োগটাই অবৈধ ছিলো। ২০১০ সালে নিয়োগ পরীক্ষায় তিনি ৫ম হয়েছিলেন। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএ পাশ। অর্থের বিনিময়ে ও স্থানীয় আওয়ামী নেতাদের চাপে তিনি প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ পান। হিজাব পরার ব্যাপারে কোন ছাত্রীকে যাতে নিরুৎসাহিত করা না হয় সে ব্যাপারে একাধিকবার বলা হয়েছিলো, কিন্তু তিনি কোন কিছুই শুনতেন না। তিনি তার মতো করে প্রতিষ্ঠানটি চালিয়েছেন।