নিজস্ব প্রতিবেদক
পান বহুল প্রচলিত একটি মুখরোচক খাবার। সিরাজদিখান উপজেলার জৈনসার ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামে স্বল্প পরিসরে পান চাষ হয়। ওইসব এলাকার মাটি ও আবহাওয়া পান চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হওয়ায় শত বছর আগেও এখানে ব্যাপক হারে পান চাষ হতো। তবে তা কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যেতে বসেছে। বিগত দিনেও ছিলো পানের বরজের বেশ কদর। তবে এখন পানের বরজের খরচ চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন বরজের মালিকেরা। পান উৎপাদনের খরচ অনুযায়ী বাজারমূল্য না পাওয়ায় অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পানের বরজের থেকে। ফলে সিরাজদিখান থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে পানের বরজ।
জানা যায়, সিরাজদিখানের উৎপাদিত পান সিরাজদিখানের চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের উপজেলা শ্রীনগর, টঙ্গীবাড়ী, লৌহজং, মুন্সীগঞ্জ সদরে সরবরাহ করা হয়। বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাইকাররা এসে উপজেলার জৈনসার ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া পানের বরজ থেকে সপ্তাহে দুইদিন পান সংগ্রহ করতেন।
পশ্চিমপাড়া গ্রামের পানচাষি সঞ্জিত পাল জানান, আমার এই পানের বরজটি আমার বাবা-দাদার ঐতিহ্য। আমার দাদার থেকে শুরু হয় আমাদের এই পান বরজ। এখন এই পান বরজ করে চলা খুব কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র করছি বাবা-দাদার ঐতিহ্যটা ধরে রাখার জন্য। আমার বাবা-দাদার সময় বিপুল পরিসরে আমাদের পানের বরজ ছিলো তা প্রায় ১ একরেরও বেশি। তবে বর্তমানে বরজ দিয়ে আমাদের চলা বড়ই মুশকিল হয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য এখন ২৫ শতাংশ জায়গার উপর আমার এই পান বরজটি করেছি। বিগত ৮/১০ বছর আগে এতটা ভয়াবহ খারাপ ছিলো না পানবাজার। আমি যে পান বরজটি করি চালতাগুড়া বিগত দিনে পানের যে বিরাটা বিক্রি করা হতো ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। এখন সেটা বিক্রি করতে হয় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। বিগত দিনের তুলনায় পানের দাম কমলেও বরজের খরচ কিন্তু কমেনি বরং বেড়েছে।
পশ্চিম পাড়া গ্রামের পানচাষি রবীন্দ্র চন্দ্র দাস জানান, নিজস্ব বাড়ির পাশে ৭ শতাংশ জমিতে পান চাষ করেন। উৎপাদন বাড়ানো, রোগব্যাধি নির্মূল, সার ও কীটনাশকের এসবে যে পরিমাণ খরচ হয় সে খরচ তোলাই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপাদানের খরচের পরিমাণ বেশি হওয়ায় এবং পানের সে পরিমাণ মূল্য না পাওয়ায় পুরনোরাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পান চাষ থেকে। ফলে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে সিরাজদিখানের এ পান শিল্প।
সিরাজদিখানে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে পানের বরজ
আগের পোস্ট