নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কনকসার ইউনিয়নের নয়নাকান্দা গ্রামের মো. বাবুল মোল্লার সেজো মেয়ে লিমা আক্তার (২৫)কে একই ইউনিয়নর কনকসার গ্রামের মো. সাইদ তালুকদারের ছেলে হাবিব তালুকদার (২৭) প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভনে বিভিন্ন সময়ে ঢাকার গুলিস্তানে হোটেলে নিয়ে গিয়ে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করে। মেয়ে তাকে বিয়ের চাপ দিলে তালবাহানা করে। একপর্যায়ে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। একদিন রাতে লিমা আত্মহত্যার চেষ্টা করলে বিষয়টি পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীদের মধ্যে জানাজানি হয়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কনকসার ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের নয়নাকান্দা গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা জানান, বাবুল মোল্লার বাড়িতে গত দুইদিন আগে ভোররাতে কান্নার শব্দ শুনতে পাই। তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখি, তাদের মেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। পরে আমরা তাদের বাড়ির পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারি, মেয়ে প্রেম করেছে এবং ছেলেটির সাথে ঢাকা গিয়ে শারীরিক সম্পর্কে করেছে। এখন বিয়ে করতে অস্বীকার করছে। প্রতিবেশীরা আরো বলেন, মেয়েটি প্রায় বাড়ি থেকে বাহিরে যেতো। অনেক সময় রাতে বাড়িতে আসতো না।
প্রতারণার স্বীকার লিমা আক্তার জানান, হাবিব তালুকদারের সাথে আমার দুই বছরের সম্পর্ক। প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে হাবিবের সাথে আমার পরিচয় হয়। পরে মোবাইল নম্বর ও ইমোতে কথা হয়। একদিন সরাসরি দু’জনে দেখা করি। আমরা দু’জন একে অপরকে পছন্দ করি। হাবিব আমাকে বিয়ে করবে বলে প্রলোভনের পর ঢাকা নিয়ে যায়। সে আমাকে অনেকভাবে বুঝিয়ে এবং আমাকে বিয়ে করবে বলে ঢাকায় একদিন হোটেলে নিয়ে যায়। তার বন্ধু তাকে সাহায্য করে। আমি রাজি না হলে আমাকে বিয়ে করবে বলে স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করে। এভাবে অনেকদিন ঢাকাসহ গ্রামের বাড়িতে অনেক জায়গায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। একপর্যায়ে তাকে আমার সন্দেহ হয়। আমি কিছু দৃশ্য ভিডিও করে রাখি এবং তাকে বিয়ে করতে চাপ দেই। সে আমার মোবাইল নম্বর ব্লক করে দেয়। সে তিনটি নম্বর ব্যবহার করতো। আমি কোন নম্বরে তাকে না পেয়ে তার বাড়িতে গিয়ে তার মায়ের সাথে দেখা করি। আমাদের সম্পর্কের কথা তাকে জানাই। তার মা আমাকে তার ছেলের সাথে কথা বলে জানাবে এবং বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পরে আমার পরিবারের সবাই আমাকে গালমন্দ করে। রাতে আমি আত্মহত্যার চেষ্টা করি। তবে পরিবারের লোকজনের কারণে সফল হতে পারিনি।
মেয়ের বাবা মো. বাবুল মোল্লা এ প্রতিবেদকের কাছে ঘটনা স্বীকার করে। এসময় তিনি বলেন, মেয়েটি বড় হয়েছে। এইচএসসি পাশ করে শ্রীনগর কলেজে পড়তো। তার যথেষ্ট বয়স হয়েছে। তাই চলাফেরায় স্বাভাবিকভাবে কোন বাধা দেইনি। এ ঘটনা জানার পর আমি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে মেয়েকে নিয়ে গিয়ে কিছু প্রমাণ দেখাই। তিনি সাথে সাথে ছেলের পক্ষের কয়েকজনকে ডেকে বিষয়টি গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে সমাধান করতে বলেন। তবে কোন সমাধানের পথ দেখছি না। আমার মেয়ে বর্তমানে ছেলের বাড়িতে গিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে হাবিব তালুকদারের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন ও এসএমএস করেও কোন প্রকার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া তার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকজনের সাথে কোন কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে কনকসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বিদ্যুৎ আলম মোড়লের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, সপ্তাহখানেক হয়েছে আমার এলাকার ৫নং ওয়ার্ডে বিয়ের প্রলোভনের শিকার হয়ে এক মেয়ে ও তার বাবা পরিষদে এসে অভিযোগ করেছেন কনকসার গ্রামের সাইদ তালুকদার ছেলে হাবিব তালুকদার বিরুদ্ধে। কিছুদিন আগে তারা এসে গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে সমাধান করবে বলে আমার কাছ থেকে সময় নিয়েছিলো। পরে তারা আর আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। বর্তমানে মেয়েটি ছেলের বাড়িতে আছে বলে আমি খবর পেয়েছি।