নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কুমারভোগ এলাকায় জমাটবদ্ধ বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় দুই শতাধিক পরিবার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কুমারভোগ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড ও পদ্মা সেতু কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড সংলগ্ন এলাকায় অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে থাকায় বছরের পর বছর মানবেতর জীবনযাপন করছে পরিবারগুলো। মাসের পর মাস পানিবন্দি থাকায় পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্করা।
স্থানীয়রা জানায়, পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় সেতু কর্তৃপক্ষের অপরিকল্পিত ব্যবস্থার কারণে এখন শত শত পরিবার পানিবন্দি। এ ভোগান্তি শুরু হয়েছে প্রায় ১০ বছর ধরে। পদ্মা সেতু নির্মাণের শুরুতে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের জন্য কুমারভোগের নদীর তীর ঘেঁষে কয়েকটি গ্রামের বেশকিছু জমি অধিগ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে অধিগ্রহণ করা জমিতে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড এবং সেতুর মালামাল রাখার ওয়ার্কশপ তৈরি করা হয়। এদিকে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের পাশে নিচু এলাকায় কুমারভোগ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে শত শত পরিবার বসবাস করে। এদের নিয়ে ভাবার কেউ নেই। সেতু কর্তৃপক্ষ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড নির্মাণ কাজের সময় এই নিচু এলাকার পানি পদ্মা নদীতে নিষ্কাশনের জন্য পরিকল্পিত কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা রাখেনি। তাই এ গ্রামে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় একটু বৃষ্টি হলেই মুহূর্তে পানি ঢুকছে বসতঘরের ভেতরে। বাধ্য হয়ে ঘরের ভেতরেই করতে হচ্ছে রান্না থেকে শুরু করে খাওয়া-দাওয়া, বাথরুমসহ সব কাজ। সমস্যায় পড়ছে নারী, শিশু ও বয়স্করা। এছাড়া বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে পড়েছে এ এলাকাবাসী। এখানকার বেশিরভাগ বিশুদ্ধ খাবার পানির টিউবওয়েল পানির নিচে ডুবে রয়েছে। এখানে বছরে তিন থেকে চার মাস জলাবদ্ধতা বা পানি আটকে থাকায় পরিবারগুলোর অনেকে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, ৮ থেকে ১০ জনের মত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। অনেকের শরীরে পানিবাহিত রোগ এবং হাতে-পায়ে ঘা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে পানিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে ঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ও আসবাবপত্র।
পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে, মুসল্লিরা মসজিদে ও পরিবারের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করতে বাইরে যেতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। এমন ভোগান্তিতে মানবেতর জীবনযাপন করছে কুমার ভোগের ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ আব্দুল মান্নান খান বলেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় আমরা দীর্ঘদিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমরা এলাকাবাসী মিলে এর আগে সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে পানি নিষ্কাশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য আবেদন করেছি, কিন্তু তারা কিছুই করেনি।
এখন লৌহজং উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যত দ্রুত সম্ভব আমাদের এই শত শত পরিবারকে স্থায়ী ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে সকলকে পানিবন্দি জীবন থেকে মুক্তি দেয়া হোক।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেন বলেন, স্থায়ী ড্রেন ব্যবস্থার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বর্তমান জলবদ্ধতা থেকে পরিবারগুলোকে রক্ষা করার জন্য কুমারভোগ ইউনিয়ন পরিষদের সচিবকে বলে দেওয়া হয়েছে খুব দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী শোয়াইব বিন আজাদ বলেন, পাইপ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছিলো। ঐ প্রকল্প বাদ দিয়ে স্থায়ী ড্রেনের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অতি দ্রুত আমরা এই প্রকল্পের কাজ শুরু করবো।