আহমেদ স্বপ্নীল : মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার মেঘনা নদীতে ঝোপ পাতার ফলে দেশি মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। নদীর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় সাধারণ জেলেরা পড়েছে বিপাকে। পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মেঘনা নদীতে ঝোপের মাধ্যমে মাছ শিকারে সরাসরি জড়িত স্থানীয় প্রভাবশালী কতিপয় ব্যক্তি।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের বড় রায়পাড়া ও মুদারকান্দি গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীর বিভিন্ন অংশে চলছে অবৈধ মাছ শিকার। ঝোপ তৈরির শুরুতে নদীতে গাছের ডালপালা ফেলা হয়। পরে চারদিকে বাঁশের বেড়া ও কচুরিপানা দেওয়া হয়। এরপর ঝোপের ভেতরে মাছের খাবার দিয়ে চারদিকে সূক্ষ্ম জাল দিয়ে ঘের দেওয়া হয়। এতে নিরাপদ ভেবে ঝোপের ভেতরে আশ্রয় নেওয়া পোনা মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করে প্রভাবশালী কতিপয় ব্যক্তি।
গজারিয়া উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মেঘনা নদীর বিভিন্ন স্থানে প্রায় শতাধিক ঝোপ আছে। এলাকাবাসী ও মৎস্যজীবীদের হিসেব অনুযায়ী, মেঘনায় কমপক্ষে দুই শতাধিকের বেশি ঝোপ রয়েছে।
উপজেলার বড় রায়পাড়া গ্রামের আলমাস মিয়াসহ অপর গ্রামবাসী জানান, বড় রায়পাড়া গ্রামের মতিউর রহমান মতি ও আব্দুল হামিদ নামের দুই ব্যক্তি সারা বছরই মেঘনা নদীতে ঝোপ দিয়ে থাকে। একটি বড় ঝোপ থেকে প্রায় তিন থেকে চার লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়। আর এটা সম্ভব হয় অবৈধ ঝোপঝাড়ের সঙ্গে জড়িত এলাকার প্রভাবশালীদের কারণে।
তারা আরো জানান, কয়েক বছর ধরেই মেঘনা নদীতে ঝোপ দিয়ে মাছ শিকার হচ্ছে। এগুলো দেখার কেউ নেই। এতে মৎস্য সম্পদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালালে নদীতে ঝোপ দেওয়া বন্ধ হতে পারে।
স্থানীয় সাধারণ জেলেরা ক্ষোভ নিয়ে জানান, জেলেদের নেই কোনো অভিযোগ দেয়ার জায়গা। অভিযোগ দিলেও এতে কর্ণপাত করার নেই কেউ। কারণ নদীর ঝোপের বড় সুস্বাদু মাছ যায় বড় বড় কর্তা ব্যক্তিদের বাসায়। শুধু মাছ নয়, সঙ্গে টাকার বান্ডিলও যায়। এসব অন্যায় দেখার কেউ না থাকায় মাছের অবাধ বিচরণ ও প্রজনন বিঘ্নিত হয়ে উপজেলার মৎস্য সম্পদ আজ হুমকির মুখে। ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে জীববৈচিত্র্যও।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তারা কল রিসিভ করেননি। তাদের মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তারও কোনো উত্তর দেয়নি তারা।
গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানান, নদীতে অবৈধ ঝোপঝাড়ের সমস্যাটি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই অবৈধ ঝোপগুলো অপসারণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।