কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু : মুন্সীগঞ্জ শহর ও শহরাঞ্চলে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে জেলা শহরে প্রতিদিনই দেখা দিচ্ছে অনাকাঙ্খিত যানজট। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকগুলো শহরের সড়কগুলো দখলে রেখে যেখানে সেখানে ইচ্ছেমতো থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করার কারণে প্রতিদিন এ অনাকাঙ্খিত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে ঘটছে নানা দুর্ঘটনাও। বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ শহরবাসীর দুর্ভোগের নতুন নাম অনাকাঙ্খিত যানজট।
এমনিতেই শহরের প্রধান সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো খানাখন্দে ভরা এবং কয়েকটি সড়ক খোঁড়াখুঁড়িতে জনদুর্ভোগ পোহাচ্ছে। তার মধ্যে সরকারি নিয়ম অমান্য করে চালকদের বেপরোয়াভাবে মিশুক ও অটোরিকশা চালানোর ফলে শহরবাসীর দুর্ভোগ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
শহরবাসীর অভিযোগ, অত্যাধিক ইজিবাইক ছাড়াও ভটভটি, শ্যালো ইঞ্জিনচালিত গাড়ি, নসিমন, করিমন গাড়িগুলোও অবৈধভাবে প্রধান সড়কগুলো চলাচল করছে।
পারভেজ তালুকদারসহ একাধিক পৌরবাসী বলেন, শহরের সুপার মার্কেট থেকে পুরনো কাচারী পর্যন্ত মানুষকে যানজট মোকাবেলা করতে হচ্ছে নিত্যদিন। ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় অপরিকল্পিতভাবে মিশুক ও অটোরিকশা চালানো, যেখানে সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করা, শহরের প্রধান সড়কের বিভিন্ন অংশে ফুটপাত দখল, দোকানপাট এবং সড়কের ওপরই পার্কিং পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। শহরের ফুটপাত দখলকারীদের কাছ থেকে বিগত সরকারের সময়ে কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী টাকার বিনিময়ে ফুটপাত দখল করে টং দোকান বসিয়ে দেওয়ায় জনগণের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
একাধিক পথচারী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রায় ৮ মাস হলেও এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের লোকজনই ফুটপাত দখল করে আছে। দখলকারীদের কারণে ফুটপাত দিয়ে পথচারীরা স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না।
শহরের একাধিক বাসিন্দা বলেন, শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দখলদার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পলাতক। তারপরও তাদের লোকজনের দখলেই আছে ফুটপাত। শহরের সুপার মার্কেট, সদর বাজার এলাকা, পুরাতন কাচারীসহ পৌর ভবনের সামনে গেলেই বোঝা যায়, কি হ-য-ব-র-ল অবস্থা। বেশিরভাগ সড়ক দখল করে আছে অবৈধ দোকানপাটগুলো। অন্যদিকে সরকার পতনের পর নতুন সরকারের সময়েও ফুটপাত দখল করে অবৈধ দোকানপাট বেড়েই চলেছে। বর্তমানে যারা ফুটপাত দখলে জড়িত, কারা তাদের মদদ দিচ্ছে? এই প্রশ্ন এখন শহরবাসীর।
শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে দেখা যায়, শহরের পৌরসভার সামনে, কলেজ রোড, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, মুন্সীগঞ্জ বাজারের জুবলী রোড, সুপার মার্কেট মোড়সহ শহরের একাধিক স্থানে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্ট্যান্ড। এছাড়া শহরের উপকন্ঠ মুক্তারপুর সেতুর ঢালে, তেলের পাম্প এলাকা, বাইন্নাবাড়ী, সিপাহীপাড়া চৌরাস্তাসহ সর্বত্রই ইজিবাইকের ছড়াছড়ি। এসব গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকাসহ কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই অবাধে চালাচ্ছে মিশুক ও অটোরিকশা। চালকরা সড়কের যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানামা করছে হরদম। কোন সিগন্যাল ছাড়া হঠাৎ গাড়ি ঘুরিয়ে ফেলে ব্যস্ততম সড়কে জটলা পাকিয়ে ফেলছে। নিয়মের তোয়াক্কা না করে অব্যবস্থাপনায় মিশুক ও অটোরিকশা চলাচল করায় শহর ও শহরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে প্রতিদিনই অনাকাঙ্খিত যানজট দেখা দিচ্ছে। একই সঙ্গে ঘটছে দুর্ঘটনাও।
সদর বাজারের ব্যবসায়ী সোহরাব মিয়া জানান, কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই অসাধু গ্যারেজ মালিকরা প্রতিনিয়ত ইজিবাইকের সংখ্যা বাড়িয়ে শহরে চালাচ্ছেন। বিভিন্ন অটো গ্যারেজগুলোতে তৈরী করা ইজিবাইকগুলো পর্যায়ক্রমে সড়কে যুক্ত হওয়ায় যানবাহনের সংখ্যাও অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন একাধিক কারণেই যানজট এখন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ব্যবসায়ী সুলতান আহম্মেদ বলেন, ব্যাটারিচালিত গাড়িগুলো বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে। সিএনজি, স্কুটার চালাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স লাগে, সরকারকে গাড়ির ট্যাক্স দিতে হয়। কিন্তু ইজিবাইক চালাতে তার কিছুই প্রয়োজন না হওয়ার সুযোগে ইজিবাইকের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এসব গাড়ি চালাতেও ড্রাইভিং লাইসেন্স ও নাম্বার প্লেটের আওতায় নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে মুন্সীগঞ্জ সুপার মার্কেট এলাকা থেকে পুরাতন কাচারী পর্যন্ত প্রধান সড়কটি হচ্ছে শহরের প্রাণকেন্দ্র। এ সড়ক পথের সুপার মার্কেট থেকে বড় মসজিদ মার্কেট পর্যন্ত প্রায় ছোট-বড় ১০ থেকে ১৫টি গর্ত রয়েছে সড়কের মাঝখানে। আগে যানবাহন চলাচলের জন্য গর্তের মাঝে রাবিশ ফেললেও পরবর্তীতে আর সংস্কার করা হয়নি।
অটোরিক্সা চালক আব্দুল আজিজ মিয়া জানালেন, গর্তগুলো এড়িয়ে চলতে গিয়ে প্রায় সময়ই এখানে যানজটের সৃষ্টি হয়।
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী বলেন, শিগগিরই শহরের প্রধান সড়কসহ অন্যান্য রাস্তাও মেরামত করে দুর্ভোগ লাঘব করা হবে। এ প্রসঙ্গে মুন্সীগঞ্জের সদর ট্রাফিক কার্যালয়ের একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, ইজিবাইকের কারণে যানজট নিরসন করতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয়। এখন শহরের বিভিন্ন স্থানে ইজিবাইক ও মিশুক তৈরীর একাধিক কারখানা গড়ে উঠেছে। ফলে অতিরিক্ত ইজিবাইক সড়কে যুক্ত হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।
শহরের সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের ভাষ্য, এই পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সুধী সমাজ এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মত দেন তারা।