নিজস্ব প্রতিবেদক : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন মুন্সীগঞ্জে একটি মেডিকেল কলেজ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের কাজ যাতে উদ্বোধন করা যায় এজন্য চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি গতকাল সোমবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে মুন্সীগঞ্জ জেলার উন্নয়ন সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
এসময় তিনি আরো জানান, জেলার যোগাযোগ অবকাঠামো কিভাবে উন্নয়ন করা যায় সে বিষয়ে সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া গত ৫ আগস্ট দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মুন্সীগঞ্জ পৌরভবন সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি জানান, মুন্সীগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের ছনবাড়ী থেকে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর হয়ে শহরের প্রবেশমুখ পর্যন্ত চার লেনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন হবে।
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাতের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, নৌবাহিনীর প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ গোলাম রসুল এবং ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি একেএম আওলাদ হোসেনসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিববৃন্দ।
এর আগে জেলার উন্নয়ন সংক্রান্ত এক গুরুত্বপূর্ণ সভা শেষে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত ভ্রমণ বিষয়ক বই ‘প্রত্নকথা’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এসময় অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্কিত বিভাগের সচিব মোঃ শাহ্রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোঃ নিজাম উদ্দিন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব ড. মোঃ খায়েরুজ্জামান মজুমদার, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মোঃ মফিদুর রহমান, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল কাইয়ুম মোল্লা, ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাবিনা আলম, বিআইডব্লিউটিএ এর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা, বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি একেএম আওলাদ হোসেন, এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রশীদ মিয়াসহ দেশের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও স্থানীয় কর্মকর্তাবৃন্দ।
ভ্রমণ বিষয়ক বইটি প্রকাশনার বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমা তুল জান্নাত বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রত্ননগরী খ্যাত মুন্সীগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখা, জেলার পর্যটনকে সমৃদ্ধ করা ও আগামী প্রজন্মের কাছে এগুলোকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে এ ধরনের একটি ভ্রমণ বিষয়ক বই প্রকাশ করতে পেরেছি এবং আজকে এতো সুন্দর একটি আয়োজনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এটির মোড়ক উন্মোচন করতে পেরেছি। বইটি সংরক্ষণের লক্ষ্যে ও শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জানার সুবিধার্থে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থা, লাইব্রেরি, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়, রিসোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রেরণের পরিকল্পনা রয়েছে। ভ্রমণ বিষয়ক বইটিতে মুন্সীগঞ্জের প্রত্নতাত্ত্বিক ও দর্শনীয় ৬২টি স্থানের সচিত্র বর্ণনা, অবস্থান, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া মুন্সীগঞ্জ জেলা ভ্রমণে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য একদিনে ভ্রমণ করা যায় এমন তিনটি ট্যুর প্ল্যান বা ভ্রমণ পরিকল্পনা সন্নিবেশিত হয়েছে। পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসুদের সুবিধার্থে এতে জেলা এবং উপজেলার আলাদা আলাদা মানচিত্র, আবাসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের কথা বিবেচনায় রেখে বইটির সকল তথ্য ও বর্ণনা বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় লিখিত হয়েছে। এটির অনলাইন ভার্সন জেলা প্রশাসন, মুন্সীগঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া বইতে প্রদত্ত কিউআর কোড স্ক্যান করেও এটির পিডিএফ ভার্সন পড়ার উপযোগী করা হয়েছে।
বইটি সম্পাদনা করেছেন জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শরীফ উল্যাহ। তিনি জানান, মুন্সীগঞ্জ জেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। তার সাথে যোগ হয়েছে আরও অনেক নতুন নতুন দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় স্থান। মুন্সীগঞ্জ ভ্রমণে এলে এই স্থানগুলো না দেখলে যে কোনো পর্যটকের একটা বড় অতৃপ্তি থেকেই যাবে। পর্যটক বা ভ্রমণপিপাসুদের চোখের শান্তি এবং মনের তৃপ্তির জন্য মুন্সীগঞ্জ হতে পারে একটি উত্তম পছন্দ। মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রদ্ধেয় জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাতের পরিকল্পনা ও দিক-নির্দেশনায় ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এই বইটি প্রকাশিত হয়েছে। এটি মূলত দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেলার একটি ভ্রমণ গাইড হিসেবে কাজ করবে।