নিজস্ব প্রতিবেদক : মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার রুহিতপুর গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ভোর কীর্তনের কৃষ্ণ নামের মধ্য দিয়ে পালন করেছে পহেলা বৈশাখ। গত সোমবার ভোড়ে গ্রামটির প্রতিটি হিন্দু বাড়িতে গিয়ে খোল কর্তাল ও কাঁসর ঘন্টা, শঙ্খ বাজিয়ে এলাকার যুবক ছেলেরা কৃষ্ণ নামের সুরে সুরে গান গেয়ে কীর্তন করেন। কীর্তনটি রহিতপুর গ্রামের স্বর্গীয় গৌরাঙ্গ মন্ডলের বাড়ি হতে শুরু করে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে কৃষ্ণ নাম গেয়ে পুনরায় তার বাড়িতে শেষ হয়।
এসময় কীর্তন নিয়ে আসা হিন্দু পরিবারের মহিলারা প্রদীপ জ্বালিয়ে ও বিভিন্ন ফল-ফলাদি ও নানা রকমের মিষ্টি দিয়ে পূজার ব্যবস্থা করেন। প্রায় শত বছর ধরে গ্রামটিতে ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছরের ফাল্গুন মাসের ৩০ তারিখ থেকে শুরু করে পহেলা বৈশাখ ভোর কীর্তন ও আনন্দ উল্লাসের মধ্য দিয়ে নতুন বছর শুরু করেন। গ্রামটিতে প্রায় ২৫টি সনাতন ধর্মের পরিবারের বাড়িতে গিয়ে কীর্তন করেন এলাকার যুবকেরা। এছাড়াও হিন্দু ব্যবসায়ীরা গনেশ পূজার মধ্য দিয়ে দিনটিতে হালখাতা শুরু করেন।
কীর্তন শেষে এলাকার বয়স্ক মহিলারা জানান, এ গ্রামে বহু বছর আগে থেকে কীর্তন করতে দেখেছি। শুনেছি, তারও বহু আগে থেকে এখানে এভাবেই কীর্তন করে আসছে। প্রায় শত বছর ধরে এ গ্রামে কীর্তনটি চলমান আছে।
পরিমল মন্ডল জানান, প্রায় ৭০ বছর ধরে এ গ্রামের লোকজন ফাল্গুন মাসের ২৯ তারিখ থেকে শুরু করে পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত ভোর কীর্তন করে আসছে। আমরা আনন্দ উল্লাসের মধ্য দিয়ে কৃষ্ণ নামে কীর্তন করে বছর শুরু করি। বছরের প্রথম দিনে আমাদের কীর্তন করলে পুরো বছর ভালোভাবে কাটে।
একই গ্রামের প্রশান্ত দাস জানান, বছরের ফাল্গুন মাসের শেষদিন থেকে কীর্তন শুরু করেন। প্রতি সন্ধ্যায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে কীর্তন করেন। বৈশাখ মাসের ১ তারিখে শেষ হয়।
জেলা হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট অজয় কুমার চক্রবর্তী জানান, পহেলা বৈশাখ আমাদের বাঙ্গালি জাতির সকলের উৎসব। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই যার যার মতো করে পহেলা বৈশাখ পালন করে। আমরা সনাতন ধর্মের লোক, তাই আমাদের নতুন বছরের শুরু হয় কৃষ্ণ নামে। সোমবার সরকারিভাবে পহেলা বৈশাখ পালন করলেও পঞ্জিকার দিন অনুযায়ী সনাতন ধর্মে আমরা পহেলা বৈশাখ পালন করি। তাছাড়া যে কোন কাজের শুরুতে আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তার নামে শুরু করি। ঠিক তেমনি সনাতন ধর্মের প্রতিটি পরিবারের লোকজন যার যার মতো করে পহেলা বৈশাখ পালন করেন কৃষ্ণ নামের কীর্তনের মধ্য দিয়ে।
তিনি আরো জানান, হিন্দু ব্যবসায়ীরা গনেশ পূজা করে ব্যবসার হালখাতা শুরু করেন।
তিনি নতুন বছর উপলক্ষে সকলকে শুভেচ্ছা জানান।