আরাফাত রায়হান সাকিব : মুক্ত কর ভয়, সংশয়-সঙ্কটে আমরা অকুতোভয়, আমরা সদা অগ্রগামী। পুরাতনকে ভুলে নতুন পথে-প্রত্যয়ে ছড়াই এগিয়ে চলার বাণী, যেন এমনই মর্মে উল্লাস-আনন্দের ছড়াছড়ি সর্বক্ষেত্রে। মুন্সীগঞ্জে নানা উৎসব আনন্দে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ বরণ করে নিয়েছে জেলাবাসী।
গত সোমবার সকাল ৮টায় এ উপলক্ষে কালেক্টরেট মাঠ থেকে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। এতে অংশ নেয় বিভিন্ন ধর্ম-মতসহ নানা শ্রেণি পেশার সর্বস্তরের জনসাধারণ। শোভাযাত্রায় প্রধান্য প্রায় গ্রাম-বাংলার বিভিন্ন ঐতিহ্যের স্মারক। বর্ণিল সাজে অংশ নেয় আপমর জনসাধারণ। কেউ আসে বন্ধুর দলে, কেউ সপরিবারে। পুরুষেরা পাঞ্জাবি আর নারীরা শাড়ি, শিশুরাও ছিল নানা সাজে। প্রদর্শিত হয় লাল-সবুজের বাংলাদেশের পতাকা। সেই সাথে এবার শোভাযাত্রায় দেখা যায়, নির্যাতিত ফিলিস্তিনের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে ফিলিস্তিনের পতাকা। ঢাক-ঢোল আর বৈশাখী স্লোগানে মুখরিত হয় শহর। শোভাযাত্রাটি শহরের শহরের সুপার মার্কেট শহীদ চত্ব¡রসহ বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে লোকজ মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়। লোকজ মেলায় কারুপণ্য, মাটির পণ্যসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের পসরা বসে। নানা বর্ণের মানুষের উপস্থিতিতে মিলনমেলায় পরিণত হয় শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ।
এসময় শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত, পুলিশ সুপার সামসুল আলম সরকারসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ। জেলা কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এদিকে জেলার অন্যতম বিদ্যাপীঠ সরকারি হরগঙ্গা কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও উৎসবমুখর পরিবেশে নববর্ষ উদযাপন করা হয়।
পুলিশ সুপার সামসুল আলম বলেন, বৈশাখের অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে পালনের লক্ষ্যে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল।
জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত জানান, নতুন বছরে সবাইকে বলতে চাই, আমরা সবাই এগিয়ে যাব। আমরা সকলে এই নতুন দেশকে ইতিবাচকভাবে অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবো। সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সে চেষ্টা করবো।
এছাড়াও গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন মেলায় দোকানী এবং গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। জেলার বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত মেলাগুলোতে মাটির পাতিল, বিভিন্ন খেলনা যেমন- বাঘ, হরিণ, গরু, ঘোড়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন পশু-পাখি, ফুলের টব, রকমারি পুতুল বিক্রি হতে দেখা যায়। বাড়ি-বাড়িতে ছিল পান্তা ইলিশসহ হরেক রকমের খাবারের আয়োজন। দুপুরে কিছুটা বৃষ্টি হলেও বিকালে পরিবারের সাথে মাওয়া পদ্মা পাড়সহ বিভিন্ন পর্যটক স্পটে ঘুরতে দেখা যায় জনসাধারণকে। গ্রামীণ মেলায় নাগরদোলা, চরকির উপস্থিতি দেখা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন করে নববর্ষ বরণ করে নেয়।
মুন্সীগঞ্জে উৎসব উল্লাসে নববর্ষ বরণ ; আবহমান বাংলার ঐতিহ্য প্রাধান্য
আগের পোস্ট