নিজস্ব প্রতিবেদক : মুন্সীগঞ্জ পৌর শহরের সর্বদক্ষিণের কাটাখালী বাজারের রাস্তাটি খানাখন্দে ভরা। কয়েক বছর ধরে এ রাস্তাটিতে এ ধরণের অবস্থা বিরাজমান। এ রাস্তাটি বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। এ রাস্তা দিয়ে চলাচলে যাত্রী ও পায়ে হাঁটা মানুষের ভোগান্তি দিনদিন বেড়ে চলেছে। এতোকিছুর পরেও এ রাস্তাটি মেরামতের কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। তার ফলে এখানকার মানুষের জনর্দুভোগ ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে দিনে দিনে। সেই সাথে এ রাস্তা নিয়ে ভেতরে ভেতরে মানুষের মাঝে ক্ষোভ ধানা বাঁধছে।
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার শেষ সীমান্তের শহর হচ্ছে কাটাখালী বাজার। এটি ভৌগলিকভাবে শহরের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। এ শহরের কাটাখালী বাজারের শেষে শুরু হয়েছে মহাকালী ইউনিয়নের সীমানা। আর পূর্ব-দক্ষিণে শুরু হয়েছে চরকেওয়ার ইউনিয়নের সীমানা। বৃটিশ আমলে এ কাটাখালী বাজারকে কেন্দ্র করে এখানে বেশকিছু সরকারি ভবন গড়ে ওঠে। তার মধ্যে রয়েছে জেলার খাদ্যগুদাম ও জেলা খাদ্য অফিস। সেই সময়ে একটি মূলধারার পোস্ট অফিসও খোলা হয় এখানে। এ কারণে এখানকার পোস্ট অফিসের একটি নিজস্ব পোস্ট কোড রয়েছে। কিন্তু কালের আর্বতে এখন সেই জৌলুস আর নেই। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এ পোস্ট অফিসে সেই ধরণের কাজ এখন আর দেখা যায় না।
প্রাচীন বিক্রমপুরের ইতিহাসে এখান থেকে ছোট ছোট লঞ্চ চলাচল করতো পদ্মা নদীর দীঘির পাড়ের দিকে সদর উপজেলা ও অন্যান্য উপজেলাগুলোতে। স্বাধীনতার পরে সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় এ পথে লঞ্চ চলাচল একসময় বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময়টাতে এখানকার বাজারও ছিল জমজমাট। এখানে রয়েছে মুন্সীগঞ্জ কলেজ, জেলা প্রাথমিক অফিস, টিবি হাসপাতাল, প্রাণিসম্পদ জেলা অফিস ও বন সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এ সড়ক দিয়ে যেতে হয় জেলা আনসার অফিস, টেলিফোন অফিস ও ডায়বেটিকস হাসপাতালে। চরাঞ্চলের ৫টি চরে যাতায়াতের সহজ পথ হচ্ছে এটি। এ পথের আরো একটি লিংক রোড হচ্ছে মুন্সীরহাট। মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার একমাত্র হাটটি হচ্ছে মুন্সীরহাটে। এ বাজার দিয়ে সহজেই এ হাটে যাওয়া যায়। এ বাজারকে কেন্দ্র করে এর আশপাশের ইউনিয়নের লোকজন এখানে বেশিরভাগ সময়ে যাতায়াত করে থাকে। সবকিছু মিলিয়ে এ রাস্তাটি সবার কাছেই গুরুত্বপূর্ণ।
কাটাখালী বাজারটি আরো একটি দিক দিয়ে এ শহরের মানুষের কাছে এখনো গুরুত্বপূর্ণ। আর সেটি হচ্ছে এখানে ঘর তৈরির পুরনো টিন ও কাঠ পাওয়া যায়। মুন্সীগঞ্জ পৌর শহরের মানুষেরা তাদের চাহিদামতো এসব পণ্য এখান থেকেই সংগ্রহ করে থাকেন। তবে রাস্তার করুণ দশার ফলে তাদের ব্যবসায় এখন মন্দাভাব দেখা দিয়েছে।
এ রাস্তার উত্তরে রয়েছে মুন্সীগঞ্জ আদর্শ ডিগ্রি মাদ্রাসা, মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার কবরস্থান, সার্কিট হাউজ ও জেলা পরিষদের ভবন। এ রাস্তাটির শিলমন্দি এলাকা থেকে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। আর শেষ হয়েছে কাটাখালী বাজারের স’মিলের ওখানে। স’মিলের ওখানে রাস্তাটি আর রাস্তার মধ্যে নেই। এর পিচের অংশ সবটুকু উঠে গেছে ইতোমধ্যে। এ রাস্তাটিতে এখন বেহাল দশা বিরাজ করছে। এ রাস্তার বেশিরভাগ স্থানে পিচের অংশ উঠে গিয়ে সেখানে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তাতে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় পথ চলা কোন কোন সময়ে কঠিন হয়ে পড়ে পথচারীদের। দূর-দূরান্তের লোকজন জেলা শহরে যাতায়াতের এ পথটি ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু রাস্তা ভাঙ্গা থাকার কারণে তাদেরকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এখানকার বেহাল রাস্তার কারণে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য অনেকটাই কমে গেছে বলে দাবি উঠেছে ব্যবসায়ী মহল থেকে। এ পথে চলাচলকারীরা এ রাস্তাটি মেরামতের জোর দাবি জানিয়েছেন।
কাটাখালী বাজারের মেসার্স ভূইয়া টেড্রার্সের মালিক মোঃ সোহরাব ভূইয়া বলেন, কয়েক বছর ধরে এখানকার রাস্তাটি খারাপ। রাস্তার কারণে অনেকে এখানে কেনাকাটা করতে আসেন না। এর ফলে এখানকার ব্যবসায়ীরা এখন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
চরকেওয়ার ইউনিয়নের অধিবাসী ইয়াসিন মোল্লা বলেন, রাস্তার অবস্থা ভীষণ খারাপ। এখানে পথচলা বড় দায়।
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী বলেন, এ রাস্তার জন্য বরাদ্দ পেলে এখানে কাজ শুরু হবে।