নিজস্ব প্রতিবেদক : মুন্সীগঞ্জ আদালতে বিচারাধীনে থাকা এক মামলায় সাক্ষী প্রবাসে (সিঙ্গাপুর) থেকেও অনলাইনে সাক্ষ্য দিলেন সাগর হাসান নামে এক যুবক। এই সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালতের বিচারক চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গাজী দেলোয়ার হোসেন।
গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে আদালতের বিচারকার্য চলাকালীন সময়ে বিচারকের এজলাসে বসে এ সাক্ষ্য গ্রহণ করেন বিচারক। মামলার সাক্ষী সাগর হাসান মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার মূলচর গ্রামের সেকুল দেওয়ানের ছেলে। মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে টঙ্গীবাড়ী উপজেলার কামারখাড়া ইউনিয়নের পূর্ব ধুপরা পাশা জামে মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায়ের পর সাগর হাসান বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা করলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার মূল চর গ্রামে মামলার বিবাদীরা সাগর হোসেনকে হত্যার উদ্দেশ্যে সুইচ গিয়ার দিয়ে পেটে আঘাত করে।
এ ঘটনায় জখমির বাবা সেকুল দেওয়ান বাদী হয়ে একই এলাকার রিহান হাওলাদারসহ দুইজনকে আসামি শ্রেণিভুক্ত করে ঘটনার দুইদিন পর টঙ্গীবাড়ী থানায় মামলা করেন। মামলা দায়েরের পর সাগর হাসান সিঙ্গাপুর চলে যান। বিচারাধীনে থাকা মামলায় বাদী সেকুল দেওয়ান আদালতে সাক্ষ্য দিলেও জখমি সাগর হাসান প্রবাসে (সিঙ্গাপুর) থাকায় সাক্ষ্য দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় মামলাটি নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এই বিষয়ে আদালতের বিচারক চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সাগর হাসান সিঙ্গাপুরে থাকা অবস্থায় আদালতের এজলাসে বসে অনলাইনের মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। বিচারকের এমন সন্তেুাষজনক কাজে ব্যাপক সাড়া পড়েছে আদালত পাড়া ও বিচার প্রার্থীদের মাঝে।
ওই আদালতে আসা একাধিক বিচার প্রার্থী বলেন, আগে তো অনলাইনে সাক্ষী নেওয়ার কথা কখনো শুনিনি। যেহেতু আদালতের বিচারক এত সুন্দরভাবে মোবাইল দিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে বিদেশে থাকা সাক্ষীর সাক্ষ্য নিলেন, বিষয়টি খুব প্রশংসনীয়। এভাবে সাক্ষী নিলে মামলার অনেক বাদী এবং সাক্ষী বিদেশে কিংবা দূরে থেকেও আদালতে সাক্ষ্য দিতে পারবে। বিচারককে এমন ভালো কাজের সাধুবাদ জানাই।
এ ব্যাপারে ওই আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুলতানা রোজিনা ইয়াসমিন বলেন, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট স্যার একজন ন্যায়বিচারক। বিচারপ্রার্থীদের সুবিধার্থে আদালতের অনেক কিছুই পরিবর্তন করতে পেরেছেন। যাহা বিচারপ্রার্থীদের জন্য প্রশংসনীয় কাজ। আজ প্রথমবারের মত একটি বিচারাধীনে থাকা মামলার সাক্ষী সিঙ্গাপুরে থেকেও অনলাইনে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। খুব সুন্দরভাবেই বিচারক সে সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। এতে করে কোন সাক্ষী দূরে থাকলেও কাজের জন্য আদালতে আসতে না পারলেও অনলাইনের মাধ্যমে সাক্ষ্য দিতে পারবেন।
এ ব্যাপারে ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী বুলবুল আহমেদ জানান, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে এবং বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের স্যার একযোগে কাজ করে যাচ্ছেন। মামলার অনেক সাক্ষী বিদেশে চলে যায় সেই সাক্ষীদের অনলাইনে সাক্ষ্যগ্রহণপূর্বক মামলা তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তির জন্য আমাদের স্যার আজ অনলাইনে একটি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন।
এ ব্যাপারে ওই মামলার বাদি সেকুল দেওয়ান (৫৫) বলেন, আমার ছেলেকে সুইস গিয়ার দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে পেটে আঘাত করায় আমি নিজে বাদী হয়ে টঙ্গীবাড়ী থানায় মামলা করেছি। অনেকদিন ধরে আদালতে সাক্ষীর জন্য মামলাটি চলমান রয়েছে। এর আগে আমি এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছি। তবে আমার ছেলে সাগর হাসান বর্তমানে সিঙ্গাপুর আছে। ম্যাজিস্ট্রেট স্যার মোবাইলে অনলাইনের মাধ্যমে আমার ছেলের সাক্ষ্য নিয়েছেন। আমি ভাবতেই পারি নাই যে, ম্যাজিস্ট্রেট স্যার মোবাইলের মাধ্যমে এত সুন্দরভাবে আমার ছেলের সাক্ষ্য নিবেন। স্যারের এমন ভালো কাজে আমি অনেক আনন্দিত। আমার ছেলে সিঙ্গাপুরে থেকেও সাক্ষ্য দিতে পেরেছে। আমি স্যারের কাজে অনেক সন্তুষ্ট হয়েছি।