নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার ডহরি-তালতলা খালের উপর নির্মাণাধীন বালিগাঁও সেতুর কাজের ধীরগতির কারণে প্রধান সড়কে খালের উপর মেয়াদোত্তীর্ণ জরাজীর্ণ বেইলি সেতু দিয়ে প্রতিদিন শত শত বাস, ট্রাক ও অন্য যানবাহনের চালক-যাত্রীরা পারাপার হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। এ বেইলি সেতুর পাটাতন ভাঙ্গা থাকায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। টঙ্গীবাড়ী-লৌহজং উপজেলার পদ্মার শাখা নদীর ডহরি-তালতলা খালের ওপর এ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে।
স্থানীয়রা বলেন, ধীরগতিতে কাজ চলায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে পরিবহন শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীরা। পরিবহন চালক ও পথচারীরা বলছে, বেইলি সেতুটি সরু ও নড়বড়ে হওয়ার কারণে দুই প্রান্তে যানজটে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয়। নতুন সেতুটি চলতি বছরের প্রথম দিকে চালু হওয়ার কথা থাকলেও কাজের ধীরগতির কারণে চালু হয়নি। তাই ঝুঁকি ও ভোগান্তি নিয়ে এ পথে চলাচল করতে হচ্ছে।
পথচারী শরিফ মাতবর বলেন, পাকা ব্রিজের কাজ আরম্ভ করার সময় শুনেছিলাম ২০২৪ সালের শুরুতে এই ব্রিজটি চালু হবে। এখনতো সেপ্টেম্বর মাস ব্রিজের কাজ তো শেষ হলো না। আমরা এই ভাঙ্গাচুরা ব্রিজের উপর দিয়ে চলাফেরা করি ভয়ের মধ্যে থাকি, কখন ভেঙে নদীতে পড়ে যায়।
বালিগাঁও বেইলি ব্রিজে যানজটে অপেক্ষায় থাকা যাত্রী জামাল বলেন, আমি নিয়মিত এই পথে চলাচল করি। সেতুর কাজ যেভাবে কচ্ছপ গতিতে চলছে মনে হচ্ছে আরো এক বছর লাগবে।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৯০ শতাংশ কাজ শেষে হয়েছে। ৩য় দফা সময় বাড়ানো হয়েছে। চলতি বছরের নভেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। তাই দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে নির্মাণ কাজ।
জানা যায়, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার শেষ সীমানা ও টঙ্গীবাড়ী-লৌহজং উপজেলাকে যুক্ত করবে এই সেতু। ২ লেন বিশিষ্ট সেতুটির দৈর্ঘ্য ৯৮ মিটার এবং প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫ মিটার। দুই উপজেলায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক প্যাকেজে। তিনটি কংক্রিট সেতুর মধ্যে টঙ্গীবাড়ী উপজেলার ৪১ মিটার বলই সেতু, লৌহজং উপজেলার ৩৮ মিটার খেতেরপাড়া সেতু ও ডহরি তালতলা খালের উপর নির্মাণাধীন ৯৮ মিটার বালিগাঁও সেতু। এই তিনটি সেতুর মধ্যে বলই সেতু ও খেতেরপাড়া সেতুর নির্মাণ প্রকল্পের চলমান কাজ ৯৫ ভাগ শেষ হয়ে গেছে। তবে এই দুই সেতুর বাকি আছে সেতুর দুই পাশের রেলিং ও রংয়ের কাজ।
এছাড়া মুন্সীগঞ্জ জেলাকে বেইলি সেতু মুক্ত করতে কাজ করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সড়ক বিভাগের অধীনে ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতুর স্থানে কংক্রিটের সেতু প্রতিস্থাপনের প্রকল্প চলমান রয়েছে।
গত ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর সেতু নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। পরে স্ট্রেকশন হয়ে চলতি বছরের জুন এবং আগস্টের পরে সেপ্টেম্বর করা হয়েছিল। আবারও বাড়িয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার (এনডিই) কোম্পানি সেতুর নির্মাণ কাজ করছে।
গতকাল রবিবার সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মার শাখা নদীর (ডহরি-তালতলা) টঙ্গীবাড়ী-লৌহজং দুই উপজেলা মিলে নির্মাণ হচ্ছে সেতুটি। চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। সেতুর বিমের উপর ঢালাইয়ের কাজ প্রায় শেষের দিকে। এছাড়া সেতুর দুইপাশের সংযোগ সড়কে মাটি ভরাট চলছে। নির্মাণ প্রকৌশলীরা সার্বক্ষণিক কাজ তত্ত্বাবধান করছেন। আছেন (এনডিই) ও সওজের সাইট ইঞ্জিনিয়ার।
মুন্সীগঞ্জের সড়ক ও জনপথ (সওজ) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নাজমুস হোসেন সাকিব জানান, বালিগাঁও সেতুর কাজ চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। স্ট্রেকশন হয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সেতুর কাজ নভেম্বরে শেষ হবে। ১ প্যাকেজে তিন সেতুর মধ্যে বালিগাঁও সেতু ইতিমধ্যে ৯০ শতাংশ কম্পিলিট হয়ে গেছে। বাকি দুই সেতুর কাজ ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি আছে সেতুর দু’পাশের রেলিং ও রংয়ের কাজ।