নিজস্ব প্রতিবেদক
ভুট্টা অত্যন্ত পরিচিত ও জনপ্রিয় একটি খাবার। ভূট্টার খই বা পপকর্ন কখনো খায়নি এমন মানুষ আজকাল আর খুঁজে পাওয়া দুস্কর। এছাড়া ভুট্টা থেকে তৈরি হতে পারে সুস্বাদু পুষ্টিকর বিভিন্ন খাবার। আবার মজাদার চাইনিজ খাবার তৈরিতে কর্নফ্লাওয়ার ভুট্টারই অবদান। ভুট্টা যেমন সুস্বদু তেমনি স্বাস্থ্যকর। দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে এর কোন জুড়ি নেই। রক্তস্বল্পতা দূর করতে সক্ষম ভুট্টা। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধী ফাইবার এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। ভুট্টা ডায়াবেটিস ও রক্তের উচ্চচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আমাদের হৃদপিন্ড ও কিডনি সুরক্ষা করে এটি। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সবসময়ই জন্মানো সম্ভব ভুট্টা। এর ফলনও বেশি। জ্বালানি হিসেবে ভুট্টার গাছও ব্যবহার করা যায়। বাংলাদেশের কৃষি জমিতে খাদ্যশস্য হিসেবে ধান ও গমের পরেই ভুট্টার দখলে। ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টায় পুষ্টি বেশি। এতে প্রায় ১১% আমিষ জাতীয় উপাদান রয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত ভুট্টার বেশকিছু উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে। এগুলো হলো শুভ্রা, বর্নালী, মোহর, খই ভুট্টা, বারি ভুট্টা-৬, বারিভুট্টা-৭, বারি মিষ্টি ভুট্টা-৩, বারি টপক্রস হাইব্রিড ভুট্টা-১, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৫, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৭। এছাড়া আরো বেশ কয়েকটি জাতের ভুট্টা রয়েছে। পছন্দমতো জাত বেছে নিয়ে ভুট্টা চাষের উপযোগী জমিতে লাগাতে হবে। বেলে ও দোঁআশ মাটি ভুট্টা চাষের জন্য ভালো। জমি এমন হতে হবে যেন পানি জমে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভুট্টা বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হলো রবি মৌসুম মধ্য অগ্রহায়ণ (অক্টোবর – নভেম্বর) এবং খরিপ মৌসুম ফাল্গুন থেকে মধ্য চৈত্র (ফেব্রুয়ারী- মার্চ) পর্যন্ত। সার ব্যবস্থাপনায় ফসলের ভালো ফলনের জন্য সার প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ। ভুট্টার কম্পোজিট জাতীয় প্রতি হেক্টরে রবি মৌসুমে ১৭২ থেকে ৩১২ কেজি এবং খরিপ মৌসুমে ২১৬ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োজন। হাইব্রিড জাতের জন্য রবি মৌসুমে এ চাহিদা ৫০০ কেজি। এছাড়া জাতের হিসেবে এর প্রয়োগ কমবেশি হতে পারে। রবি মৌসুমে সেচ প্রয়োগ করলে ভুট্টার আশানুরুপ ফলন পাওয়া যাবে। বীজ বপনের ২০ দিনের মধ্যে প্রথম সেচ, ৩০ -৩৫ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় সেচ, ৬০ দিনের মধ্যে তৃতীয় সেচ এবং ৮০-৮৫ দিনের মধ্যে চতুর্থ সেচ দেয়া যেতে পারে। তবে দানা বাধার সময় জমিতে পানি জমে যাওয়া ক্ষতিকর। চারা গজানোর ৩০ দিনের মধ্যে অতিরিক্ত আগাছা জমি থেকে তুলে ফেলতে হবে। বালাই দমনের ক্ষেত্রে ভুট্টার সাধারনত যেসব রোগবালাইয়ের আক্রমণ দেখা যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পঁচা ও চারা গাছের রোগ। নানা রকমের বীজ ও মাটিবাহিত ছত্রাকের কারণে এ রোগ হতে পারে। এ রোগ হলে জমিতে ভুট্টার গাছের সংখ্যা কমে যায়। পাতা ঝলসানো রোগ ভুট্টার আরেকটি ছত্রাকজনিত রোগ। এই রোগ দেখা দিলে অনুমোদিত ১৫ দিন পর পর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে। ফলনের ক্ষেত্রে ভুট্টার গড় ফলন হেক্টর প্রতি কম্পোজিট জাতের গড়ে ৪ থেকে ৫.৫ এবং হাইব্রিড জাতের ৮ থেকে ১১ মেট্রিক টন হয়ে থাকে। ফলন সংগ্রহ করতে দানার জন্য ভুট্টা সংগ্রহের ক্ষেত্রে মোচা চকচক খড়ের রং ধারন করলে এবং পাতা কিছুটা হলদে হলে সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। এ অবস্থায় মোচা থেকে ছড়ালে বীজের গোড়ায় কালো দাগ দেখা যায়। ভুট্টা গাছের মোচা ৭৫-৮০% পরিপক্ক হলে ভুট্টা সংগ্রহ করা যাবে। বীজ হিসেবে অংশ থেকে বড় ও পুষ্ট দানা সংগ্রহ করতে হবে। টঙ্গীবাড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, টঙ্গীবাড়ি উপজেলায় ৪০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষাবাদ করা হয়েছে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ভুট্টার চাষাবাদ করা হয়েছে এ বছর।
টঙ্গীবাড়িতে ভুট্টা চাষাবাদ
আগের পোস্ট