নিজস্ব প্রতিবেদক
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় স্ত্রী ও তিন শিশু সন্তান নিয়ে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন একজন অসহায় বাবা। এক হাতে একটি ব্যাগ, অপর হাতে একটি টেবিল ফ্যান। কাছে গিয়ে তাদের এখানে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর প্রবাস জীবনে যা উপার্জন করেছিলাম তা বড় ভাইয়ের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। আমার টাকা দিয়ে বাড়িঘর সব হয়েছে, কিন্তু এখন আমাকে পরিবারসহ বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে বড় ভাই।
তার কাছে ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার নাম আক্তার হোসেন। আমি গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের নতুন বসুরচর গ্রামের মৃত ইয়াকুব বেপারীর ছেলে। আমার বয়স ৪৭। এর মধ্যে প্রায় ২০ বছর আমি দেশের বাইরে ছিলাম। ছুটিতে দেশে এসেছি, বিয়ে-শাদী করে চলে গেছি। আমার টাকায় ঘর-দুয়ার, জমি-জমা কিনেছেন বড় ভাই নাসির হোসেন। আমার ধারণা, বিদেশ থেকে আমি প্রায় দুই কোটি টাকার মতো পাঠিয়েছিলাম। দেশে ফিরে আসার পর মারধর করে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় সে। বড় ভাইয়ের অত্যাচারে বাধ্য হয়ে আমি পার্শ্ববর্তী দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুরে চলে যাই। বর্তমানে ছোটখাটো একটি চাকরি করে কোনরকমে সংসার চালাচ্ছি। অভাবের সংসারে ভাড়া বাড়িতে থাকা সম্ভব না হওয়ায় আবারো নিজবাড়িতে ফেরার চেষ্টা করি আমি। গত শনিবার আমরা বাড়িতে আসলে আমার বড় ভাই নাসির, তার স্ত্রী আসমা, ছেলে আশিক এবং মেয়ে সোনিয়া আক্তার আমাদের মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বিষয়টি আমরা লিখিতভাবে গজারিয়া থানায় জানাই। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকালে আমরা আবারো বাড়িতে গেলে তারা আমাদের মারধর করে বের করে দেয়। দিনভর আশেপাশের বাড়িতে বসে থেকে সন্ধ্যায় আমরা বাধ্য হয়ে থানায় আসি।
ভুক্তভোগী আক্তার হোসেনের স্ত্রী পলি আক্তার বলেন, আমার চার মেয়ে। তার মধ্যে সুমাইয়া আক্তারের বয়স ১৩ বছর, শরিফার বয়স ১১ বছর, তাসনিয়ার বয়স ৯ বছর এবং ছোট মেয়ে মুনতাহার বয়স এক বছর। আমার স্বামী যে টাকা উপার্জন করে তা দিয়ে আমাদের থাকা হলেও খাওয়া হচ্ছে না। এভাবে অনাহারে অর্ধাহারে কতদিন কাটানো যায়? তাই আমরা ভাড়া বাসা ছেড়ে নিজের বাসায় ফেরার উদ্যোগ নেই। যতবার বাসায় ওঠার চেষ্টা করেছি আমাদের মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ৩ শতাংশ জায়গার উপর আমাদের বাড়ি আছে। বৈদ্যুতিক মিটার থেকে শুরু করে জমির কাগজপত্র সব আমাদের নামে। তারপরও আমাদের মারধর করে বারবার তাড়িয়ে দেওয়া হয়। আপনারাই বলেন আমরা কোথায় যাবো?
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য জমু মিয়া বলেন, পুরো ঘটনাটি আমি জানি। অসহায় এই পরিবারটির জন্য আমার খারাপ লাগে। একটা মানুষ সারাজীবন শুধু দিয়ে গেছেন আর এখন সে মানুষটার তার বাড়িতে ঠাঁই হচ্ছে না।
গুয়াগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, আক্তার দীর্ঘদিন বিদেশে ছিল আমি জানি। তবে সে সম্প্রতি দেশে ফিরেছে এটা আমার জানা ছিল না। তাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে জমি-জমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। বড় ভাই নাসির মানুষ হিসেবে ভালো নয়, এটা নিয়ে আগেও সালিশ বৈঠক হয়েছে। তারপরও দেখছি কি করা যায়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বড় ভাই নাসির হোসেন বলেন, আক্তার আমার কাছে জমি-জমা সব বিক্রি করে দিয়েছে। এটা আমার ঘর। সে আমার ঘরে ঢুকতে চায়। সে যদি আমার ঘর দখল করতে চায় আমি তাকে কেন সেটা করতে দিব?
গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রাজিব খান বলেন, এ বিষয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ হয়েছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।