নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি বছর দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরো জটিল হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কারণ এডিস মশার ঘনত্ব বাড়ায় চলতি বছর আগের তুলনায় ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বাড়ছে। দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার অন্য বছরের তুলনায় বেশি হবে। ঢাকার পাশাপাশি এবার ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি পৌরসভাগুলোকে সক্রিয় করা জরুরি হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে প্রথম ডেঙ্গু দেখা দেয় বিগত ২০০০ সালে। ওই বছরে ৯৩ জন মারা যায়। পরবর্তী তিন বছর পরে মৃত্যুর সংখ্যা ধীরে ধীরে প্রায় শূন্যে নেমে আসে। কিন্তু ২০১৮ সালে ডেঙ্গুতে ২৬ জন মারা যায় এবং ১০ হাজার ১৪৮ জন আক্রান্ত হয়। গত ২৪ বছরের মধ্যে ২০২৩ সালে দেশে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ওই বছর ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয় এবং ১ হাজার ৭০৫ জন মারা যায়।
সূত্র জানায়, ডেঙ্গু জ্বরের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। প্রতিরোধই এই রোগ থেকে বাঁচার সবচেয়ে বড় উৎকৃষ্ট উপায়। আগে শুধু বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টি হওয়ায় ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটতো। আর ওই নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকতো। কিন্তু এখন সারা বছরই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। বিগত ২০২৩ সালে প্রথম তিন মাসে হাসপাতালে ৮৪৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিল। আর ২০২৪ সালে প্রথম তিন মাসে ১ হাজার ৭০৫ জন ভর্তি হয়েছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত ১ হাজার ৯৯৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। তার মধ্যে ৬২ দশমিক ২ শতাংশ পুরুষ ও ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ নারী রয়েছে। বিগত ২০২৩ সালে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় এবং ১ হাজার ৭০৫ জন মারা যায়। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মারা গেছে ৫৭৫ জন। চলতি বছর এ যাবৎ ডেঙ্গুতে মোট ১৪ জন মারা গেছে।
সূত্র আরো জানায়, ডেঙ্গুর প্রজনন নিয়ন্ত্রণে এবার সিটি করপোরেশন যে মশার কীটনাশক দিচ্ছে তা তেমন কার্যকরী নয়। সেজন্য তা পরিবর্তন করা প্রয়োজন। তাছাড়া প্রতিবার কীটনাশক ল্যাব টেস্ট করে ছিটানো প্রয়োজন। এমনকি ছিটানো ওষুধও মাঠ থেকে নিয়ে টেস্ট করা উচিত। কারণ যারা ওই মশার ওষুধ সরবরাহ করে তারা যে প্রতিবার প্রতি চালান ভালো ওষুধ দিয়েছে, তা তো টেস্ট করা ছাড়া বোঝা সম্ভব নয়।
এদিকে এ বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদ ও গবেষক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, এ বছর এই সময় অন্য বছরের তুলনায় এডিস মশার ঘনত্ব বেশি। গত ৬ এপ্রিল একদিনে প্রায় ৫২ জন আক্রান্ত হয়। অথচ গত বছর এই সময়ে এতো আক্রান্ত ছিল না। গবেষণা মূলত তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়। গবেষণা অনুযায়ী মশার ঘনত্ব বেড়েছে। সে অনুযায়ী যদি এখনি পদক্ষেপ না নেয়া হয় তাহলে এ বছর অনেক বেশি এডিস মশা দ্বারা আক্রান্ত হবে মানুষ। এবার ঢাকার পাশাপাশি ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু রোগী বাড়তে পারে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের মতো পৌরসভাগুলোয় মশা নিয়ন্ত্রণে কোনো কাঠামো নেই। সেক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে মশা নিয়ন্ত্রণে আরো উদ্যোগী হওয়া জরুরি।
অন্যদিকে এ বিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন জানান, মশার উৎপাদন আগের চেয়ে কম হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ মশা নিয়ন্ত্রণের কাজকর্ম খুবই কম। আর হাসপাতালেও ডেঙ্গু চিকিৎসার যে বিকেন্দ্রীকরণ করার সিস্টেম, তা এখন নেই। যে অপারেশন প্ল্যান ছিল, সেটাও এখন স্থগিত; ব্যবস্থাপনা বরং আগের চেয়ে অগোছালো। আর ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু এ বছর বাড়বে কি না তা ডেঙ্গুর ভাইরাসের ধরন বা সেরোটাইপের ওপর নির্ভর করবে। ডেঙ্গুর ধরন ডেন-২-এ যদি এবার মানুষ আক্রান্ত হয়, তাহলে ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণ খুব একটা হবে না। আর যদি সেরোটাইপ বা ধরন ডেন-৩ ও ৪ দিয়ে শুরু হয়, তাহলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং মৃত্যুও বেশি হবে।