আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সব সুপারহিরোরা টুপি পরেন না। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করা বিশ্বে এই স্কুলশিক্ষকও অন্য সব হিরোর চেয়ে কম নন। করোনায় ঘরবন্দি সকলে। বন্ধ রয়েছে স্কুল কলেজও। এমতাবস্থায় দৈনিক পাঁচ মাইল হেঁটে ৭৮ জন শিক্ষার্থীকে দুপুরের খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন যুক্তরাজ্যের প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক জেন পাওলস।
যুক্তরাজ্যের গ্রাম্বসির ওয়েস্টার্ন প্রাইমারি স্কুলের একজন সহকারী শিক্ষক জেন। তিনি প্রতিদিন ৭৮ জন শিক্ষার্থীর বাড়িতে স্কুলের দেওয়া ফ্রি খাবার পৌঁছে দেন। নিজেই সবাইকে স্কুলের দুপুরের খাবার সরবরাহ করেন। খবর দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের।
শুধুমাত্র খাবারই নয়, বরং বাচ্চাদের নিয়মিত হোম ওয়ার্ক দেন এবং তা প্রতিদিন তাদের থেকে নিয়ে আসেন। এই কাজ করতে দৈনিক তাকে কমপক্ষে ১৮ কেজি ওজন নিয়ে এই দীর্ঘপথ হাঁটতে হয়। জেন একজন সাবেক সেনা সদস্য। তিনি প্রতিদিন এই কাজটি করেন যেন, তার শিক্ষার্থীরা সবাই ঠিক থাকে। তিনি শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকের বাড়ির দরজায় খাবার নিয়ে পৌঁছে দেন।
শুধু জেন নয়, ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং আরেকজন সহকারী শিক্ষকও তাদের গাড়িতে করে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেন। যাদের বাড়ি একটু দূরে তাদেরকে খাবার পৌঁছে দেন তারা।
জেন বলেন, শিক্ষার্থীদের বাবা-মায়েরা তার এই কাজের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অনেকের এই ফ্রি খাবারের প্রয়োজন রয়েছে।
গ্রাম্বসিতে শিশুদের দরিদ্রতার শেষ জরিপে দেখা গেছে, সেখানকার ৩৪ শতাংশ শিশু দারিদ্রের মধ্যে রয়েছে এবং ওয়েস্টার্ন প্রাইমারি স্কুলের ৪১ শতাংশ শিশুকে বিনামূলে খাবার দেয়া হয়।
জেন বলেন, শিক্ষার্থীরা এবং তাদের বাবা-মায়েরা আমার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। হাই হ্যালো বা তার চেয়েও বেশি কথা বলতে চান। তারা ঘরে বদ্ধ অবস্থায় কারো সঙ্গে কথা বলতে পারেন না।
তবে এই কাজের জন্য কোনো কৃতিত্ব নিতে চান না জেন। তিনি বলেন, এই কাজের জন্য সবাই আমার দিকে নজর দিচ্ছে, এটি বিব্রতকর। আমি কেবল আমার কাজ করছি। আমাদের শিক্ষার্থীদের কল্যাণে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক কিম লিচ বলেন, আমরা স্কুল তালাবন্ধ করার আগেই একটি পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। যে করেই হোক যেসব বাচ্চারা ফ্রি খাবার পান তাদের কাছে প্রতিদিন খাবার পৌঁছে দেব। আমরা তাদের সংস্পর্শে আসি না কিন্তু তারা আমাদের জন্য বিভিন্ন কার্ড ও ধন্যবাদ নোট লিখে রাখেন। আমরা যে আশ্চর্যরকম প্রতিক্রিয়া পেয়েছি তা প্রত্যাশা করি না।
প্রধান শিক্ষক জানান, এই এলাকায় অনেক দরিদ্র লোক রয়েছেন। তারা এই খাবার পেতে কতটা উদ্বিগ্ন তা ফোনে অনেক বাবা মা জানান। অনেকের জন্য এটি জীবন বাঁচানোর মাধ্যম।
তিনি বলেন, আমাদের স্কুলের স্লোগান হলো ‘দ্য স্কুল, যে যত্ন নেয়’। আমরা আমাদের বাচ্চাদের সত্যিই যত্ন নিই। আমরা তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করবো।